27 Mar 2025
দুটি পূজা পদ্ধতি: দক্ষিণাচার ও বামাচার
মূলত দুটি ভিন্ন প্রকারের পূজা পদ্ধতি এবং তাদের শাস্ত্রীয় তাৎপর্য নিয়ে একটি বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
সাত্ত্বিক পূজা (দক্ষিণাচার):
• শাস্ত্র অনুসারে, তাঁরাশঙ্করী পীঠে যে নিত্যপূজা হয়, তা সাত্ত্বিক প্রকৃতির। এটিকে দক্ষিণাচার পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
• এই পূজার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোনো প্রকার হিংসা বা রক্তপাত নেই।
• এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমাজ এবং দেশের সকল মানুষের কল্যাণ সাধন করা।
• সাত্ত্বিক পূজা শান্ত, নির্মল এবং দেব-দেবীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার উপর কেন্দ্র করে গঠিত।
তামসিক পূজা (বামাচার):
• অন্য একটি মত অনুযায়ী, বামাচার বা তামসিক পূজায় "পঞ্চমকার"-এর (মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন) ব্যবহার প্রচলিত আছে।
• এই প্রকার পূজায় পশুবলির প্রথাও বিদ্যমান, যা তামসিক পূজার একটি অংশ।
• তামসিক পূজা সাধারণত উগ্র এবং কামনা-বাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে করা হয় বলে মনে করা হয়।
কাম, ক্রোধ ও বলিদান:
• শাস্ত্রানুসারে, কাম (লালসা) এবং ক্রোধ (রাগ) একই মুদ্রার দুটি দিক এবং এগুলি রজঃ গুণ থেকে উৎপন্ন হয়।
• বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত এই রিপুগুলি (মনের বৃত্তি) সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সাধকের বলিদানের অধিকার জন্মায় না।
• এর কারণ হলো, যিনি নিজের কাম ও ক্রোধকে জয় করতে পারেননি, তিনি পশুর প্রতি মমত্ববোধ অনুভব করতে পারবেন না এবং পশুত্বের বন্ধন থেকে তাকে মুক্ত করতে পারবেন না।
সারসংক্ষেপ:
অর্থাৎ দুটি ভিন্ন পূজা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে – একটি সাত্ত্বিক (দক্ষিণাচার), যা শান্তি ও কল্যাণের জন্য অনুষ্ঠিত হয় এবং যেখানে কোনো হিংসা নেই। অন্যটি তামসিক (বামাচার), যেখানে পঞ্চমকার ও বলিদানের প্রথা প্রচলিত আছে। শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, কাম ও ক্রোধের মতো রিপুগুলিকে নিয়ন্ত্রণ না করে বলিদানের অধিকার লাভ করা যায় না, কারণ আধ্যাত্মিক সাধনার মূল লক্ষ্য হলো পশুত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করা।